*কারামতঃ মরণাপন্ন বালককে নতুন জীবন দানঃ দামেশকে মাহবুবে ইয়াজদানী হযরত গাউসুল আলম সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী (আলাইহির রাহমাহ) অবস্থানরত ছিলেন। বেশ কিছুদিন যাবৎ বিভিন্ন ঘটনায় তার বহু কারামত এখানে প্রকাশিত হয়। যার ফলে সর্বত্র তার কথা ছড়িয়ে পড়ে। লােকজন তার শরাফত, জ্ঞানের গভীরতা, বেলায়তের উচ্চ মর্তব্য সম্পর্কে অবহিত হয়ে তাঁর সান্নিধ্যে এসে ধন্য হতে থাকে। একদিন তিনি দামেশকের জামে মসজিদ চত্বরে বসা ছিলেন। এমন সময় আলুথালু বেশে একজন অসামান্য সুন্দরী যুবতী বার বছরের কিশাের সন্তান নিয়ে হযরতের
খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁর সামনে উপুড় হয়ে পড়ল। কিশােরটি ভয়ানক অসুস্থ ছিল। চিকিৎসকগণ তার ব্যাপারে আশা ছেড়ে দেওয়ায় মা তার মরণাপন্ন সন্তান নিয়ে হযরতের দরবারে উপস্থিত হয়েছে। হযরত কিশােরটির পানে তাকিয়ে যুবতীটিকে লক্ষ্য করে বললেন, এই সন্তানের আয়ু খুবই স্বল্প আর মৃতকে জীবিত করা তাে ঈসা (আঃ) এর মােজেযা ছিল, সুতরাং একে বাঁচানাে সম্ভব পর নয়। কিন্তু সন্তানের মা হিসাবে যুবতীটি সীমাহীন অস্থির এবং নাছােড় বান্দা। তাই হযরতের সমীপে নিবেদন করল, আল্লাহর অলিগণ বহুজনকে জীবন দান করেছেন। কেননা তারা এদিক দিয়ে হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত খিজির (আঃ) এরই প্রকাশমান। এভাবে যুবতীটির ব্যকুলতা দেখে হযরত মাহবুবে ইয়াজদানী আর থাকতে পারলেন না। তিনি মােরাকাবা ও মােশাহাদায় গিয়ে চক্ষু বন্ধ করলেন। অল্পক্ষণ পর মাথা তুলে কিশাের সন্তান এর দিকে ফিরে এরশাদ করলেন, আল্লাহর নির্দেশে দণ্ডায়মান হও! একথা বলা মাত্র মরণাপন্ন কিশাের উঠে দাঁড়াল এবং হাটা চলা আরম্ভ করল।* ফজর হয়েও পিছিয়ে এল আবার রাতঃ মাহবুবে ইয়াযদানী হযরত গাউসুল আলম সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানীর (আলাইহির রাহমাহ) নিয়ম ছিল এশার নামাজ ওয়াক্তের শেষ দিকে আদায় করা। কেননা বিনিদ্র রজনী এবাদাতে মশগুল থাকতেন এবং বিভিন্ন নফল নামাজ ও অজিফা পাঠান্তে এশার নামাজ আদায় করতেন এবং এশার নামাজ শেষ করতে করতে তাহজুদের সময় হয়ে যেত। একবার পানি পথে হজ্বে যাওয়ার সময় এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটে। সেইবার পানি পথে যাওয়ার কালে ছয়মাস জাহাজে থাকতে হয় তাকে। সে সফর একদিন জাহাজ সামুদ্রিক ঝড়ে পতিত হয়। তিনদিন তিন রাত প্রবল ঝড় অব্যাহত থাকে হযরতের সফরসঙ্গীরা অত্যন্ত সন্ত্রস্ত ও চিন্তিত হয়ে দোয়া করতে লাগল। হযরত মাহবুবে ইয়াযদানী (রঃ) নিজেও দোয়া দরুদে রত থাকেন। অবশেষে ঝড় থামলে চতুর্থ রাত্রিতে হযরত নফল নামাজ সমূহ এবং অন্যান্য এবাদতসমূহ আদায় করতে করতে তিন চতুর্থাংশ কেটে যায়। অতঃপর হযরতের চোখে ঘুম নেমে আসে। কারণ ক্রমাগত তিন রাত তিন দিন একটু ও ঘুমাননি এবং সামান্য পরিমাণও বিশ্রাম গ্রহণ করেন নি। তাই ঘুমের মধ্যে অজান্তে ফজর হয়ে এল। সুবহে সাদেকের ওয়াক্ত এসে উপস্থিত হলাে এবং আকাশে লালিমা পরিদৃষ্ট হতে লাগল। এ সময় হযরতের নিদ্রা শেষ হয় এবং লােকেরা হযরতকে বলল যে, ভাের হয়েছে। এ কথা শুনে হযরত মাহবুবে ইয়াযদানী (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তায়ালা তার ফকিরদের পরিশ্রমকে কখনাে নষ্ট করেন না। তােমরা গিয়ে জাহাজের ছাদে উঠে দেখ, সম্ভবতঃ এখনাে ফজর হয়নি। একথা শুনে সকলে উপরে উঠে দেখল, ঠিকই রাতের অন্ধকারে চারদিকে ঢেকে গেছে। এরপর হযরত উঠে অজু করে স্বাভাবিক নিয়মে এশার নামাজ আদায় করলেন এবং অন্যরাও হযরতের সঙ্গে তাদের নামাজ আদায় করে নিলেন। এরপর মাহবুবে ইয়াযদানী (রাঃ) কিছুক্ষণ আরাম করলেন এবং এক ঘন্টা পর সােবহে সাদেক এর ওয়াক্ত হলাে এবং যথানিয়মে হযরতের পিছে সকলে ফজর নামাজ আদায় করলেন। এদিন থেকে হযরত মাহবুবে ইয়াযদানী (রাঃ) স্বীয় অনুচর ও মুরিদগণকে নির্দেশ দিলেন যেন আর কখনাে এশার নামাজ বিলম্ব না করে। তিনি নিজেও এরপর থেকে আর বিলম্ব করতেন না। সুবহানাল্লাহ! হযরত মাহবুবে ইয়াযদানীর কী শান! প্রকৃত পক্ষে সময়তাে আল্লাহর অলিগণেরই তাবেদার হয়ে থাকে। সাধারন লােকেরা তাদের সে শান ও ক্ষমতা অনুধাবন করতে পারেনা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন