কারামাতঃ একদিন হযরত গাউসুল আলম সৈয়দ আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানীর (আলাইহির রাহমাহ) এক বিশিষ্ট মুরীদ কাজী রফিউদ্দিন আওধী তার অন্তরে কল্পনা করতে লাগলেন বর্তমানে এখন কোন বেলায়েত প্রাপ্ত কি আছে যে, যিনি পশুর উপর যদি দৃষ্টিপাত করে তাহলে পশুর মধ্যে অলি আল্লাহর গুণ পরিলক্ষিত হবে। তার ভাবনাটা হযরতের নিকট পেশ ও করা হলাে। হযরত আব্দুর রাজ্জাক নুরুল আইন (রাঃ) এর একটি বিড়াল ছিল প্রায় সময় সেটা নিয়ে তিনি হযরতের দরবারে আসতেন। হযরত আদেশ করলেন নুরুল আইনের বিড়ালকে আমার নিকট
নিয়ে আসতে। বিড়ালটি উপস্থিত করার পরে হযরত কিছুক্ষণ ইলমে মারফতের কিছু আলােচনা করতে লাগলেন আর বিড়ালটিও তাহার আলােচনা শুনতে লাগলে একপর্যায়ে হযরত বিড়ালের দিকে একটু দৃষ্টি দিলেই বিড়ালের চেহারা পরিবর্তন হতে থাকে এই অবস্থায় এক পর্যায়ে বিড়াল বেহুস হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর হুঁশ হয়ে হযরতের পায়ে চুমতে শুরু করে তারপর থেকে হযরত যখনই বয়ান করতেন বিড়াল কাছেই বসে থাকতেন। এই ঘটনার পর থেকে বিড়ালকে খানকাহের দ্বায়িত্ব অর্থাৎ প্রত্যেক দিন কতজন মেহমান আগমন করেন সেই পরিসংখ্যান বাবুচীর কাছে পৌছানাে। যতবার বিড়াল আওয়াজ দিবে বাবুর্চী ততজনের খানার ব্যবস্থা করবেন। মেহমান গণের যতটুকু খানা প্রয়ােজন ঠিক সমপরিমান খানা বিড়ালের জন্য বরাদ্ধ থাকত। এছাড়া হযরত কাউকে ডাকতে চাইলে বিড়ালই ডেকে নিয়ে আসতো। বিড়াল ঐ ব্যক্তির কাছে গিয়ে আওয়াজ দিলেই তারা বুঝতে পারত যে হযরত আমাদেরকে ডাকছেন। ১২ বছরের ভন্ড দরবেশ বিড়ালের নিকট ধরাঃ একদিন খানকাহ শরীফে দরবেশদের একটি দল আসলেন নিয়ম মােতাবেক বিড়াল বাবুর্চীকে খবর পৌছিয়ে দিলেন। কিন্তু লঙ্গরখানায় খাওয়া শুরু তখন। দেখা গেল যে একজনের মেহমানের খানা কম। হযরত সাথে সাথে বিড়ালকে ডাকলেন এবং বললেন বিড়াল তুমি আজ এতবড় ভুল কিভাবে করেছ বিড়াল চুপ করে মেহমানদের কোলে কোলে বসতে লাগলেন আর গন্ধ নিতে লাগলেন শেষ পর্যন্ত যিনি খানার প্লেট পায়নি তার কোলে গিয়ে বিড়াল পেশাব করে দিল হযরত বললেন বিড়াল মেহমানের কোলে পেশাব করেছে বিড়ালের কোন দোষ নাই দোষীকে সাব্যস্ত করার জন্য বিড়াল সেই কাজ করেছে। সাথে সাথেই আগত মেহমানের সর্দার হযরতের পায়ে পড়ে বলতে লাগলাে হযরত আমি বিধর্মী ১২ বৎসর পর্যন্ত এই বাহ্যিক দরবেশী পােশাক পরিধান করে ঘুরতেছি কেউ আমার আসল রূপ ধরতে পারে নাই তাই আমিও কোথাও কারাে নিকট ধর্ম গ্রহণ করিনি। আজ আপনার দরবারে বিড়ালের কাছে ধরা পড়ে গেলাম আমাকে মুসলমান করেন এবং মুরীদ করেন। অতঃপর দীর্ঘদিন হযরতের সােহবতে থেকে ইবাদত, রিয়াজত, অত্যন্ত কঠিন সাধনায় সফলতা লাভ করিলে হযরত তাহাকে খিলাফত প্রদান করে বেলায়তের শাহানশাহ বানিয়ে ইস্তাম্বুলের দায়িত্বভার প্রদান করে সেথায় পাঠিয়ে দিলেন।নিজের জীবন বিলিয়ে মেহমানের জীবন রক্ষাঃ বিড়াল মাখদুম পাক ইন্তিকাল করার পরও বেচেঁ ছিলেন। একদিন লঙ্গরখানা বাবুর্চী পাতিলে দুধ গরম করিতেছেন হঠাৎ করে উপর থেকে এক বিষাক্ত সাপ সেই দুধের পাতিলে পতিত হলে বিড়াল সেটি দেখে বারবার পাতিলের চর্তুপাশে ঘুরে আর মিউ মিউ করে আওয়াজ করতে থাকলে বাবুর্চী বিড়ালের সেই বিষাক্ত সাপের সংকেত বুঝতে না পেরে বিড়ালকে বারংবার তাড়াতে থাকে এক পর্যায়ে বিড়াল নিজেই দৌড় মেরে ঝাপ দিয়ে গরম দুধের পাতিলে তার জীবন বিসর্জন দিয়ে দিলে বাবুর্চী যখন দুধ ফেলে দিতে গেল দেখতে পেল যে, বিষাক্ত লম্বা সাপ তাই বুঝতে আর বাকী রইল না যে বিড়াল তার নিজের জীবনকে বিলিয়ে মেহমানদের কে বাচিয়েছে তাই সেই বিড়ালকে অত্যন্ত আদবের সহিত কাফনের ব্যবস্থা এমনি পাকা কবর ও বানানাে হয়েছে যথাযথ আস্তানা এর একটু দুরে দারুল আমান নামক জায়গায় বিড়ালকে দাফন করা হয়েছে এখন বিল্লি বিবির মাযার নামে প্রসিদ্ধ রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন