এতদসত্বেও তাঁর অন্তরে একজন জাহেরী মুর্শিদ লাভের তীব্র আকাংখা প্রশমিত হয়নি। এ আকাংখার তীব্রতা তাঁকে বাদশাহী কর্মকান্ডে সম্পূর্ণ উদাসীন করে ফেলে। তিনি অস্থিরতা অনুভব করতে লাগলেন। তখন তাঁর বয়স পঁচিশ পরিপূর্ণ হয়। তিনি রমজান মাসের শেষ দশ দিনে শবে কদরের আশায় রাত্রি জাগরণ করেছিলেন। এ অবস্থায় সাতাশের রাতে হযরত খিজির (আঃ) এর আগমণ ঘটে এবং হযরত সুলতান আশরাফ জাহাঙ্গীর সিমনানী (রাঃ) কে বাদশাহী সিংহাসন পরিত্যাগ করে হিন্দুস্থান
অভিমুখে যাত্রা করার নির্দেশ দিলেন, যেখানে তাঁর কাংখিত মুর্শিদের সন্ধান মিলবে । হযরত খিজির (আঃ) এর নির্দেশ পেয়ে তিনি সিংহাসনের ভার স্বীয় অনুজ (ছােট ভাই) সৈয়দ আরাফের হাতে ন্যাস্ত করার সিদ্ধান্ত ঘােষনা করলেন ৭৩৩ হিঃ সনে । অতঃপর তিনি আম্মাজানের অনুমতির উদ্দেশ্যে তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন এবং পুরাে বিবরণী দিয়ে সিংহাসন পরিত্যাগপূর্বক ফকিরী অবলম্বন করে সফরের জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তাঁর মহিয়সী আম্মা হযরত খাদিজা বেগম তাঁকে বললেন, ‘ প্রিয় সন্তান তুমি জন্ম গ্রহণের পূর্বেই সুলতানুল আরেফীন হযরত খাজা আহমদ বসভী (রঃ) স্বপ্নে আমাকে তােমার জন্মের সুসংবাদ দিয়ে বলেছিলেন যে, আমাকে এমন সন্তান প্রদান করা হবে, যার বেলায়তের সূর্যালােক গােটা পৃথিবী আলােকিত হবে এবং তার হেদায়তের ফলে পৃথিবী হতে গােমরাহীর তমসা দূরীভুত হবে। হয়ত আজ সে ভবিষ্যদ্বানীরই বাস্তব রূপ লাভ করতে যাচ্ছে। তাই আমি তােমাকে আল্লাহর হাতে সােপর্দ করছি ।* সফর শুরু ও আম্মাজানের অনুমতি নিয়ে তিনি খােদার রাহে বেরিয়ে পড়লেন সবকিছু পরিত্যাগ করে। তাঁর পিছনে পড়ে রইল রাজসিংহাসন, রাজ্য ও রাজত্ব, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, সঙ্গী সহচর সকলেই। তবে তাঁর আম্মাজানের ইচ্ছানুযায়ী বিশেষ আড়ম্বর আয়ােজন সহকারে তাঁকে সিমনানের শেষ সীমানা পর্যন্ত লােকজন বিদায় জানাতে এসেছিল। সকলে অশ্রুসজল নয়নে হযরতকে বিদায় জানিয়েছিলেন। হযরতের অন্তরও বিচ্ছেদ বেদনায় বিমুঢ় হয়েছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন