মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

Khilafat of Hazrate Abu Bakar Siddiq(RA)

 --------------খােলাফায়ে রাশেদীন-------------------

খােলাফায়ে রাশেদীনের কোন খলীফাই অস্ত্র তলোয়ার কিংবা অন্য কোনরূপ শক্তির জোরে খেলাফত লাভ করেন নাই। বরং প্রত্যেকেই তাহারা ঐ পদ লাভ করিয়াছিলেন সম-সাময়িক লােকদের মধ্যে স্বীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং ফজীলতের মাধ্যমে এবং সাহাবায়ে কেরামের ঐক্য ও রাজী রগবতের ভিত্তিতে।

"হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)এর খেলাফত:"

হযরত আবু বকর (রাঃ) মুহাজির ও আনছার উভয় শ্রেণীর সাহাবাগণের সম্মিলিত অনুমতি,

ইচ্ছা এবং আগ্রহের ফলে খেলাফতের আসনে অধিষ্ঠিত হইয়াছিলেন। হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم)-এর ইন্তেকালের পর কতিপয় আনছার নেতা এইরূপ প্রস্তাব পেশ

করিলেন যে, আমাদের আনসারদের পক্ষ হইতে এক জন এবং আপনাদের মুহাজিরদের পক্ষ হইতে একজন প্রতিনিধি যুক্তভাবে খলীফা নিযুক্ত হউক কিন্তু হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) ইহার জবাবে বলিলেন হে আনছার সম্প্রদায়! আপনাদের কি এ কথা স্মরণ নাই যে হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) স্বীয় জীবদ্দশায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে নামাজের ইমামতের জন্য নির্দেশ দিয়াছিলেন। আনছারগণ সমস্বরে বলিয়াছিলেন, হাঁ, তাহা সত্য। হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) আবার বলিলেন, হে আনছারগণ! বলুন তাে, কে এমন আছে যে, মর্যাদায় হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) অপেক্ষা অগ্রগণ্য? আনছারগণ বলিলেন, (নাউযুবিল্লাহ) আমরা কেহই তেমন দাবী করি না। অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলিলেন, বলুন তাে আপনাদের মধ্যে কে এমন আছে যে, আল্লাহর রাসুল (صلى الله عليه وسلم) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে যেখানে দাঁড় করাইয়া গিয়াছেন, সেখান হইতে তাঁহাকে হটাইয়া দিবেন? আনছারগণ বলিলেন, আমরা কেহই এমন কাজ করিতে চাহি না বরং এ ব্যাপারে আমরা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি। মােটকথা, তখন আনছার ও মুহাজিরগণ সকলেই ঐক্যবদ্ধভাবে হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর হাতে বায়াত করিলেন।

বায়াতকারীদের মধ্যে হযরত মাওলা আলীও (রাঃ) ছিলেন। এক ছহীহ্ রেওয়াতে বর্ণিত আছে, সকলের বায়াতের পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) পরপর তিনদিন পর্যন্ত সকল মুসলমানকে লক্ষ্য করিয়া বলিতেছিলেন, হে মুসলিম ভাইগণ! তােমাদের মধ্যে কেউ আমার হাতে খেলাফতের বায়াত করাকে অপছন্দ করিলে বল, আমি ইহা প্রত্যাখ্যান করিতে সদা প্রস্তুত। হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর এইরূপ উক্তি শুনিয়া হযরত আলী শেরে খোদা (রাঃ) অগ্রবর্তী হইয়া বলিয়াছিলেন, জনাব! আমরা কেহই আপনার বায়াত প্রত্যাহারকামী নই এবং কেহ এই খেলাফত পদ লাভের জন্য আকাঙখীও নই। কেননা খােদ রাসূলে কারীম (صلى الله عليه وسلم) ই আপনাকে অগ্রগণ্য করিয়া গিয়াছেন। এমন কে আছে যে, আপনাকে সেখান হইতে পিছাইয়া দিতে পারে?


নির্ভরশীল সাহাবী এবং রেওয়ায়েতকারীদের বর্ণনা এই যে, হযরত আলী (রাঃ) ই হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর খেলাফতের ব্যাপারে সর্বাপেক্ষা কঠোর ভূমিকা প্রদর্শন করিয়াছিলেন। এক বর্ণনায় আছে যে, জংগে জামালের পরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উকু (রাঃ) নামক এক সাহাবী হযরত আলী (রাঃ)-এর কাছে জিজ্ঞাসা করিলেন, জনাব! হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) তাঁহার অবর্তমানে খেলাফতের দায়িত্ব  বহন সম্পর্কিত কোন কথা কি আপনার কাছে প্রকাশ করিয়াছিলেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন, এ ব্যাপারে আমি বহু অনুসন্ধান এবং চিন্তা-ভাবনার পর এই সিদ্ধান্তে পৌছিয়াছি যে, নামাজ হলো দ্বীন-ইসলামের প্রধান রােকন। তদুপরি আমরা আমাদের দুনিয়াবী ব্যাপারে সেই জিনিসকেই গ্রহণ করিয়াছি, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) যাহা আমাদের দ্বীনের জন্য পছন্দ করিয়াছেন।

তিনি তাহার জীবনের শেষ জীবদ্দশায় অসুস্থ অবস্থায় নিজের স্থানে (অর্থাৎ নামাজের ইমামতে) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কেই নিযুক্ত করিয়াছিলেন। তিনি ১৭ ওয়াক্তের নামাজ পড়ান এবং মাওলা আলী (রা.) সহ সকল সাহাবায়ে কেরাম উনার পিছনে জামাতে নামাজ আদায় করেন। বেলাল আযান প্রদান করিয়া যখন হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم)-এর খেদমতে উপস্থিত হইতেন, তখন তিনি বলিয়া দিতেন, আবু বকর (রাঃ) কে বল, তাকে নামাজ পড়াইয়া দিতে।ইহা ছাড়াও হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) স্বীয় জীবদ্দশায় হযরত আবু বকর (রাঃ) সম্পর্কে এমন বহু উক্তি বলিয়াছিলেন, যাহা দ্বারা মনে হইত যে, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم)-এর অবর্তমানে খেলাফত পদের জন্য হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ই সর্বাধিক উপযুক্ত।

হযরত ইবনে বাতহা হযরত মাওলা আলী (রাঃ) -এর উক্তি নকল করিয়া বলেন যে, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم)-এর খেদমতে আরজ করা হইয়াছিল যে, ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাঃ)! আমরা আপনার পরে কাহাকে আপনার

খলিফা বানাইব? হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) জবাব দিলেন, যদি তােমরা আবু বকরকে খলীফা বানাও তবে উহাকে পরম বিশ্বস্ত, দুনিয়াবিরাগী এবং পরকাল আকাঙ্খী দেখিবে। যদি তােমরা ওমরকে খলীফা বানাও তবে তাহাকে হিম্মতওয়ালা শক্তিমান এবং এমন বিশ্বস্ত দেখিবে যে সে আল্লাহর কোন কাজে কোন সমালােচকের সমালােচনাকেই পরােয়া করিবে না। আর যদি তােমরা আলীকে খলীফা বানাও তবে তাহাকে তােমরা সুপথ প্রাপ্ত এবং সুপথ প্রদর্শক হিসাবে দেখিবে। হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) -এর এই এরশাদ মুতাবেকই সমস্ত সাহাবা হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর খেলাফতকে বিনা

মতভেদে সমর্থন করিলেন।

হযরত আবু হােরায়রা (রাঃ) বর্ণিত একটি হাদীস রহিয়াছে, হযরত রাসূলে করীম (صلى الله عليه وسلم) এরশাদ করিয়াছেন, আমি আমার মেরাজের কালে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে আরজ করিলাম হে মা'আবুদ! তুমি আমার পরে আলীকে আমার প্রতিনিধি বানাইও। ইহা শুনিয়া ফেরেশতাগণ বলিলেন যে, ইয়া রাসূলাল্লাহ (صلى الله عليه وسلم)! আল্লাহ পাক সকল কিছুই নিজ ইচ্ছানুযায়ী-ই করিয়া থাকেন। আপনার পরে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) খলীফা হইবেন।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, হযরত আলী (রাঃ) আমার নিকট এরশাদ করিয়াছেন, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) এই দুনিয়া হইতে ততক্ষণ পর্যন্ত বিদায় গ্রহণ করেন নাই, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি আমার নিকট হইতে এই (আহাদ) প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করিয়াছেন যে, তাঁহার পরে খলীফা হইবেন হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) তাঁহার পরে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ), তাহার পরে হযরত ওসমান জুন্নুরাইন (রাঃ) এবং তাঁহার পরে হযরত মাওলা আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ)।(বুখারী শরিফ)

এক হাদিসের রেওয়াতে পাওয়া যায় একজন মহিলা হুজুরে পাক ( صلى الله عليه وسلم) এর কাছে আসে মাসলা জিজ্ঞাসা করার জন্য তখন সে মহিলা বললো ইয়া রাসুলাল্লাহ আমি যদি পরবর্তীতে আবারো আসি কিছু জিজ্ঞাসা করার জন্য আর আপনাকে যদি বাহায়াত (জীবিত) না পায় তাহলে কার কাছে যাব? হুজুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) বললেন আবু বকর (রা.) এর কাছে।(বুখারী:৬২২০) এই রেওয়ায়াত এর মতেও বুঝা যায় যে হুজুর ( صلى الله عليه وسلم) এর পরে আবু বকর (রা.) ই খলিফা হবেন।

(সংকলনঃ হুজুর গাউসে আজম হযরত শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ এর লেখা বিখ্যাত কিতাব গুনিয়াতুত তালেবিন)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

Hazrat Noorul Aen Ki Shadi, Aulad Aur Sajjadanashin Janashine Makhdoom Ashraf

  Jab Syed Ashraf Jahangir Simnani (R.A) Syed Abdur Razzaq Noorul Ain (R.A) ki Zahir o Batini Tarbiyat farma chuke aur unhain uloom o funoon...