হযরত মাওলা আলী শেরে খোদা (রাঃ) এর খেলাফত ও জঙ্গে জামাল ও জঙ্গে সিফফিনঃ হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফত পদ লাভও জনগণের ঐক্য এবং সাহাবাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হইয়াছিল। হযরত আবু আবদুল্লাহ ইবনে বাতহা (রা.) হযরত আলী (রাঃ) এর পুত্র (শাহজাদা) মুহাম্মদ ইবনে হানফিয়া (রাঃ)-এর রেওয়াত নকল করিয়া বলেন, হযরত মুহাম্মদ ইবনে হানফিয়া (রাঃ) এরশাদ করিয়াছেন যে, হযরত ওসমান জুন্নুরাইন (রাঃ) যখন বিরােধীদের দ্বারা অবরুদ্ধ ছিলেন, তখন আমি আমার বাবা হযরত আলী (রাঃ) এর সঙ্গে ছিলাম। এক ব্যক্তি আসিয়া বলিল, শীঘ্রই আমীরুল মুমিনীন হযরত ওসমান (রাঃ) কে হত্যা করাহইবে। হযরত মাওলা আলী (রাঃ) একথা শুনা মাত্র দাঁড়াইয়া গেলেন। আমি তখন তাঁহার নিরাপত্তার জন্য তাঁহার কমর জড়াইয়া ধরিলাম। তিনি বলিলেন, আমাকে ছাড়িয়া দাও।
অতঃপর তিনি হযরত ওসমান (রাঃ) এর গৃহে উপস্থিত হইলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা, ইতিমধ্যেই আমীরুল মুমিনীন হযরত ওসমান (রাঃ), শাহাদত বরণ করিয়াছিলেন। তখন হযরত আলী (রাঃ) সেখান হইতে ফিরিয়া আসিয়া স্বীয় গৃহে প্রবেশ করিলেন ভিতর হইতে দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন। কিছুক্ষণ পরেই লােকগণ আসিয়া বাহির হইতে দরজা নাড়িতে লাগিল। তাহারা তাঁহার গৃহে প্রবেশ করলো
এবং খবর দিল যে, হযরত ওসমান (রাঃ) কে শহীদ করা হইয়াছে। এখন মুসলমানদের জন্য খলীফার প্রয়োজন। আমাদের মতে আপনি ব্যতীত এই পদের যােগ্য এখন আর কোন দ্বিতীয় ব্যক্তি নাই।
তখন হযরত আলী (রাঃ) জবাব দিলেন, তােমরা আমাকে খলীফা বানাইবার খেয়াল পরিত্যাগ কর। আমি খলিফা হওয়া অপেক্ষা তােমাদের জন্য পরামর্শদাতা হওয়া উত্তম মনে করি। তোমরা অন্য কাউকে খলিফা বানিয়ে নাও। লােকগণ বলিল, আল্লাহর কসম, আমরা খেলাফতের জন্য যােগ্যতম ব্যক্তি হিসাবে আপনাকে ছাড়া আর কাহাকেও দেখতেছি না। হযরত আলী শেরে খোদা (রাঃ) বলিলেন, যদি তােমরা আমার কথা একান্তই না শুনো তবে আমি বলি, তােমরা এভাবে গােপনে আমার বায়াত করিও না। বরং আমি মসজিদে আসিতেছি, যে আমার বায়াত করতে চায় সে যেন তথায় আসিয়া আমার বায়াত করে। এই কথা বলিয়া হযরত আলী (রাঃ) মসজিদে নববীতে চলিয়া গেলেন। মুহাজির আনসারগণ ও জনসাধারণ সেখানে তাহার হাতে বায়াত করিল। সেইদিন হইতে তিনি তাহার শাহাদাতের দিন পর্যন্ত পূর্ণ হকের উপর খেলাফতের পদে বহাল ছিলেন।
খারেজী সম্প্রদায়ের লােকেরা ইহার বিপরীত কথা বলে আল্লাহ তাহাদেরকে হেদায়াত দান করুন। উহারা বলে যে, হযরত আলী (রাঃ) কখনই হকের উপর ছিলেন না। (নাউযুবিল্লাহি) অবশ্য হযরত তালহা (রাঃ), হযরত জোবায়ের (রাঃ) এবং উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)-এর সাথে হযরত মাওলা আলী (রাঃ) এর যুদ্ধের (জঙ্গে জামাল) ও হযরত আমীরে মোয়াবিয়া (রাঃ) এর সাথে যুদ্ধের (জঙ্গে সিফফিন) প্রসঙ্গটি থাকিয়া যায়। এই প্রসঙ্গে হযরত আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এইভাবে বিশ্লেষণ প্রদান করিয়াছেন যে, উল্লিখিত ব্যক্তিগণের সাথে হযরত আলী (রাঃ) এর বিবাদ বিসম্বাদের ব্যাপারে সকলেই নির্বাক (চুপ) থাকা চাই। কেননা সাহাবায়ে কেরামদের মাঝে এই অনৈক্যের ব্যাপারগুলির সুষ্ঠু ফায়ছালা রােজ কেয়ামতে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই করিবেন।
আল্লাহ কুরআন কারীমে ইরশাদ করেনঃ আমি তাদের বক্ষসমূহের মধ্যে যা কিছু হিংসা-বিদ্বেষ সবই শেষ করে দিব, তারা পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাবে, আর তারা আসন সমূহের উপর মুখোমুখি হয়ে বসবে। (আল-হিজর-৪৭)
অবস্থা ও ঘটনা বিশ্লেষণের দ্বারা দেখা যায় যে, সমসাময়িক বিজ্ঞ বিচক্ষণ লােকগণ বিশেষতঃ
মদীনার অধিবাসীগণ সকলেই একযােগে বিনা দ্বিধায় হযরত আলী (রাঃ) এর খেলাফতকে স্বীকৃতি বানাইয়াছিলেন, কেননা খােদ হযরত মাওলা আলী শেরে খোদা (রাঃ) স্বীয় খেলাফতের সত্যতা ও হকের উপর পূর্ণ আস্থাবান এবং দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। একারণে খেলাফতের বিরােধীগণের সহিত তাঁহার যুদ্ধ করার সত্যিকার অধিকার এবং অনুমতি ছিল। পক্ষান্তরে হযরত তালহা (রাঃ), হযরত জোবায়ের (রাঃ), হযরত আয়েশা (রাঃ) এবং আমীরে মুআবিয়া (রাঃ) ও সত্যের উপর বহাল ছিলেন। কেননা তাহারা মজলুম খলীফা হযরত ওসমান জুন্নুরাইন (রাঃ) -এর খুনের বদলার দাবীদার ছিলেন। ঘটনাক্রমে হযরত ওসমান (রাঃ)-এর ঘাতকদল খুনীরা (ইহুদি নাসারা মুনাফিক যারা মুসলিম সেজে ছিল) হযরত আলী শেরে খোদা (রাঃ) এর সৈন্যদের মাঝে (লস্করে) শামিল ছিল। যার জন্য হযরত আয়েশা (রাঃ) ও হযরত আমিরে মোয়াবিয়া (রাঃ) উনাদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হল যে হযরত আলী (রাঃ) এজন্য হযরত উসমান (রাঃ) এর হত্যাকারীদের শাস্তি দিচ্ছেন না কারণ তারা হযরত আলী এর দলেরি ছিলো এবং তিনিও তাদের সাথে শরিক আছেন। আর এই ভুল বুঝাবুঝিও ইহুদি নাসারা আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা (সাবায়ি বালওয়ায়ী) ওইসব মুনাফিকদের কারণে হয়েছে। তারাই হযরত আয়েশা (রাঃ) এর লস্করে হামলা চালায় আর গুজব ছড়িয়ে দিল যে লস্করে আয়েশা আমাদের উপর হামলা করেছে। এইখান থেকেই দুই দলের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝিতে যুদ্ধের সৃষ্টি হয়।
এই দিক দিয়া লক্ষ্য ও বিচার করিলে দেখা যায় উভয় পক্ষেরই যুদ্ধ করার সিদ্ধ এবং ন্যায্য অধিকার ছিল। এইজন্যই ঐ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের বিরুদ্ধে আমাদের যে কোন প্রকার উক্তি হইতে বিরত থাকা বাঞ্ছনীয়।
হুজুর গাউসে আজম বড় পীর হযরত শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) বলেন যে,
আহলে সুন্নত অল জামাআতের সুসিদ্ধান্ত এই যে, যে ব্যাপার নিয়া সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে
অনৈক্য বা মতভেদ দেখা গিয়াছে, সে ব্যাপারে মুসলমানগণ সম্পূর্ণরূপে নিশ্চুপ থাকিবে, কোনরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিবে না। সাহাবাদের প্রতি কোনরূপ অশােভন উক্তি প্রয়ােগ না করিয়া শুধু তাহাদের ফজিলত ও গুণাবলীর চর্চা করিবে।।
আমাদেরকে নিজেদের গুনাহের প্রতি লক্ষ্য করা উচিত আর নিজের মাগফিরাতের চিন্তা করা দরকার।আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুক।
[সংকলঃ হুজুর গাউসে আজম হযরত শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ এর লেখা বিখ্যাত কিতাব গুনিয়াতুত তালেবিন।]
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Featured post
Hazrat Noorul Aen Ki Shadi, Aulad Aur Sajjadanashin Janashine Makhdoom Ashraf
Jab Syed Ashraf Jahangir Simnani (R.A) Syed Abdur Razzaq Noorul Ain (R.A) ki Zahir o Batini Tarbiyat farma chuke aur unhain uloom o funoon...
.jpg)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন