বুধবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

Fazilat of Sahabaye Keram

সাহাবাকেরামের ফজিলত ও মরতবাঃ 

মহান সাহাবায়ে কেরামের শান ও মরতবা অফুরন্ত ও অপরিসীম। উহা বর্ণনা করিয়া শেষ কর যায় না। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে তাহাদের তারীফ এবং প্রশংসা করিয়াছেন। ইহারা রাসূলে কারীম (صلى الله عليه وسلم) এর যামানায় উভয় কিবলার দিকে ফিরিয়া নামাজ আদায় করিয়াছেন। আল্লাহতায়ালা কোরআনে বলেন, যাহারা ফতেহ মক্কার পূর্বে আল্লাহর রাস্তায় দ্বীনে ইলাহীর জন্য মালদৌলত খরচ করিয়াছে ও দ্বীনের জন্য জিহাদ করিয়াছে, তাহারা তাহাদের সমশ্রেণীর নহে, বরং তাহাদের অপেক্ষ বহু গুণে উচ্চ মর্যাদার পাত্র, যাহারা ফতেহ মক্কার পরে আল্লাহর পথে জান-মাল খরচ ও জিহাদ করিয়াছে। অবশ্য আল্লাহতায়ালা এ উভয় সম্প্রদায়কেই কল্যাণ ও জান্নাত প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছেন।(আল-হাদিদঃ১০)
আল্লাহ আরো ইরশাদ করেনঃ আল্লাহ্‌     প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাদেরকে,যারা তোমাদের  মধ্যে  ঈমান এনেছে এবং সৎ কর্ম করেছে যে, অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে খিলাফত প্রদান      করবেন যেমনি তাদের পূর্ববর্তীদেরকে দিয়েছেন;  এবং অবশ্যই  তাদের জন্য  সুদৃঢ়  করে দেবন       তাদের ওই দ্বীনকে,যা তাদের  জন্য মনোনীত করেছেন এবং অবশ্যই  তাদের  পূর্ববর্তী  ভয়   ভীতিকে নিরাপত্তায় বদলে   দেবেন।(আন-নূরঃ৫৫) 
মুহাম্মদ (صلى الله عليه وسلم) আল্লাহ্‌র  রসূল; এবং তার উপর যারা ঈমান এনেছে এবং তার সংগে যারা আছে, তারা  কাফিরদের  উপর  কঠোর এবং পরস্পরের  মধ্যে   সহানুভূতিশীল,  তুমি  তাদেরকে দেখবে রুকূ’কারী, সাজদারত, আল্লাহ্‌র  অনুগ্রহ ও সন্তষ্টি  কামনা  করে,   তাদের চিহ্ন তাদের  চেহারায় রয়েছে সিজদার  চিহ্ন,তাদের    এ  বৈশিষ্ট্য তাওরাতের  মধ্যে  রয়েছে এবং তাদের (অনুরূপ) বৈশিষ্ট্য রয়েছে  ইঞ্জিলে যেমন  একটা ক্ষেত,  যা আপন  চারা  উৎপন্ন করেছে, অতঃপর  সেটাকে শক্তিশালী করেছে, তারপর  তা শক্ত  হয়েছে, তারপর  আপন কাণ্ডের উপর সোজা হয়ে দণ্ডায়মান হয়েছে, যা চাষীদেরকে  আনন্দ দেয়, যাতে তাদের দ্বারা কাফিরদের অন্তর (হিংসার আগুনে) জ্বলে; আল্লাহ্‌ ওয়াদা করেছেন তাদের সাথে, যারা তাদের মধ্যে  ঈমানদার  ও সৎকর্মপরায়ণ-ক্ষমা  ও  মহা প্রতিদানের।(আল-ফাতহঃ২৯)
উল্লিখিত আয়াতের তাফসীরে হযরত জাফর ছাদেক (রাঃ) স্বীয় পিতা হযরত ইমাম বাকের
(রাঃ) এর উক্তি নকল করিয়া বলেন যে, ['অল্লাযীনা মাআহু '] (তার সংগে যারা আছে) দ্বারা বলা হইয়াছে হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর কথা। যিনি সুখে-দুঃখে সর্বসময়ে হুযুরে পাক (সাঃ) এর একনিষ্ঠ বন্ধু এবং সহচর ছিলেন।
আর 'আশিদ্দাউ আলাল কুফফারি ’ (যিনি কাফিরদের উপর কঠোর) কালাম দ্বারা ইঙ্গিত করা হইয়াছে হযরত ওমর ইবনে খাতাব (রাঃ) কে, আর 'রুহামাউ বাইনাহুম ’ (পরস্পরের মধ্যে সহানুভূতিশীল) এর ইঙ্গিত হযরত ওসমান (রাঃ) এর দিকে। আর 'রুক্কাআন সুজ্জাদান' (তুমি তাদেরকে দেখবে রুকুকারী সিজদারত) কালাম দ্বারা বলা হইয়াছে হযরত আলী (রাঃ) এর কথা।' অ ইয়াবতাগূনা ফালাম মিনাল্লাহি অ'রিদ্বওয়ানান' ( আল্লাহ্‌র  অনুগ্রহ ও সন্তষ্টি  কামনা  করে) দ্বারা হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) দুই অন্তরঙ্গ বন্ধু হযরত তালহা (রাঃ) এবং হযরত জোবায়ের (রাঃ) এর কথা বলা হইয়াছে। 'সীমাহুম ফী উজুহিহিম মিন আছারিস সুহৃদ ' দ্বারা ইঙ্গিত দান করা হয়েছে হযরত সাআদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ), হযরত সাঈদ (রাঃ), হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এবং হযরত আবু ওবাইদাহ ইবনে জাররাহর (রাঃ) দিকে। মােটকথা, উল্লিখিত আয়াতসমূহে সাহাবায় কেরামদের মধ্যে আশারায়ে মুবাশশারাহ অর্থাৎ বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত দশজন বিশিষ্ট সাহাবীর কথা উল্লেখ করা হইয়াছে। হুজুর গাউসে আজম বড় পীর হযরত শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) বলেন যে,
আহলে সুন্নত অল জামাআতের সুসিদ্ধান্ত এই যে, যে ব্যাপার নিয়া সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যে
অনৈক্য বা মতভেদ দেখা গিয়াছে, সে ব্যাপারে মুসলমানগণ সম্পূর্ণরূপে নিশ্চুপ থাকিবে, কোনরূপ মন্তব্য প্রকাশ করিবে না। সাহাবাদের প্রতি কোনরূপ অশােভন উক্তি প্রয়ােগ না করিয়া শুধু তাহাদের ফজিলত ও গুণাবলীর চর্চা করিবে। হযরত মাওলা আলী (রাঃ), হযরত তালহা (রাঃ), হযরত আমিরে মুআবিয়া (রাঃ), হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীদের প্রসঙ্গ যাহা ইতিপূর্বে উল্লেখ করিয়াছি তাহা নিয়া আমাদের কোন রূপ আলােচনা সমালােচনার বদলে যবান বন্ধ করিয়া রাখা কর্তব্য। বরং আমাদের উচিত, তাঁহাদের প্রত্যেকের বােযর্গী ও ফজীলতকে মনে-প্রাণে স্বীকার করা। এই ব্যাপারে আল্লাহ কোরআন কারীমে বলেনঃ অর্থাৎ ইহারা সেই বিগত সম্প্রদায়। তাহাদের কৃত কার্যাবলী তাহাদেরই যিম্মায় আর তােমাদের জিম্মায় শুধু তােমাদেরই কার্যাবলী। তাহাদের কার্যাবলীর বিষয় তােমরা জিজ্ঞাসিত হইবে না।(আল-বাকারাঃ ১৩৪)
হুজুর পাক (صلى الله عليه وسلم) এরশাদ করিয়াছেন যে, তােমরা যখন আমার সাহাবীদের সম্পর্কে আলােচনা কর, তাহাদের প্রতি কোনরূপ কটুক্তি করিও না। অন্য হাদীসে আসিয়াছে, তােমরা আমার সাহাবাদের পরস্পর মতবিরােধ সম্পর্কে কোনরূপ উক্তি না করিয়া নীরব থাক। তাহাদের কাহারও উপরে কোনরূপ দোষারােপ করিও না। জানিয়া রাখ, তােমাদের কেহ আল্লাহর রাস্তায় পাহাড় তুল্য স্বর্ণ খরচ করিয়াও সাহাবাদের ছওয়াবের শত ভাগের একভাগ ছওয়াবও অর্জন করিতে পারিবে না।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) এরশাদ করিয়াছেন, কতই সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি, যে ঈমানের সাথে আমাকে দেখিয়াছে এবং আমার সহিত সাক্ষাতকারীকে দেখিয়াছে। হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) আরও বলিয়াছেন, তােমরা আমার সাহাবীদেরকে গালি গালাজ করিও না। আমার সাহাবীদেরকে গালী বর্ষণকারীদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত (লানত)।(বুখারী ও আবু দাউদ শরীফ)
হুজুর পাক (صلى الله عليه وسلم ) আরো এরশাদ করিয়াছেন যে, শেষ যমানায় এমন একটি দলের অভ্যুদয় ঘটিবে, যাহারা আমার সাহবীদের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুন্ন করার চেষ্টায় থাকিবে। খবরদার! তােমরা উহাদের সাথে উঠাবসা করিও না। উহাদের সাথে বিবাহ-সাদির সম্পর্ক করিও না। উহাদের জানাযা পড়িতে যেও না। উহাদের উপর অভিশাপ প্রদান করাও দুরস্ত।
হযরত জাবের (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) এরশাদ করিয়াছেন, হােদায়বিয়ার বৃক্ষের নীচে যাহারা আমার হাতে বায়াত করিয়াছে, তাহারা কখনও দোজখী হইবে না। হযরত আবু হােরায়রা (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) এরশাদ করিয়াছেন, বদরের মুজাহিদদের অবস্থা দেখিয়া আল্লাহ তায়ালা বলিয়াছেন, যাও, এখন তােমরা যাহা ইচ্ছা কর, আমি তােমাদেরকে মাফ করিয়া দিলাম। যেসব সাহাবা হুজুর পাক ( صلى الله عليه وسلم) এর সাথে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছেন তাদের ব্যাপারে আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেনঃ ওই দরিদ্র হিজরতকারীদের জন্য (এ সম্পদ) যাদেরকে আপন ঘরবাড়ি ও  সম্পদ  থেকে উৎখাত করা হয়েছে। তারা আল্লাহ্‌র  অনুগ্রহ ও  তাঁর সন্তুষ্টি   চায় এবং আল্লাহ্‌  ও রসূলের    সাহায্য করে। তারাই সত্যবাদী।(সুরা হাশর-০৮)
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বলেন, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) এরশাদ করিয়াছেন, আমার সাহাবীগণ নক্ষত্র সদৃশ (স্বরুপ)। তােমরা তাহাদের মধ্য হইতে যাহারই অনুসরণ করিবে সোজা পথ ও নাজাত প্রাপ্ত হইবে। অন্য হাদীসে আছে যে, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) এরশাদ করিয়াছেন, আমার কোন সাহাবী যে জমিনে মৃত্যুবরণ করিবে, সে সেই জমিন ওয়ালার জন্য রােজকিয়ামতে সুপারিশকারী হইবে। হযরত সুফিয়ান ইবনে উনাইজ (রাঃ) বলেন যে, হুযুরে পাক (صلى الله عليه وسلم) এর কোন সাহাবী সম্পর্কে কেহ যদি একটি খারাপ কথাও উচ্চারণ করে, তবে সে গােমরাহ এবং কুপথগামী হইবে।
[সংকলনঃ হুজুর গাউসে আজম হযরত শায়খ আব্দুল কাদির জিলানী রহঃ এর লেখা বিখ্যাত কিতাব গুনিয়াতুত তালেবিন।]


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

Hazrat Noorul Aen Ki Shadi, Aulad Aur Sajjadanashin Janashine Makhdoom Ashraf

  Jab Syed Ashraf Jahangir Simnani (R.A) Syed Abdur Razzaq Noorul Ain (R.A) ki Zahir o Batini Tarbiyat farma chuke aur unhain uloom o funoon...