খাজা গরিবে নেওয়াজ (আলাইহির রাহমা) এর আধ্যাত্মিকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারঃ
পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান আল
ইসলামের সুশীতল পতাকা তলে অসহায়,
দিকভ্রান্ত , পাক পঙ্কিলতায় ডুবে থাকা
মুসলমানদের মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহ
রাব্বুল আলামীনের মাহবুব আউলিয়ায়ে
কেরামরা যুগে যুগে এ ধরাধামের
বিস্তীর্ণ এলাকায় তশরীফ এনেছেন।
রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে
ওয়াসাল্লাম এর সত্যিকার প্রতিনিধি
হিসেবে তাঁরা মানব কল্যাণে রহমত স্বরূপ
পদস্খলন প্রতিরোধে তাঁরা স্বীকার
করেছেন অপরিসীম কষ্ট ও ত্যাগ। তাঁদের
অবিরাম সাধনার মধ্য দিয়ে পৃথিবী
ব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আল্লাহর
মনোনীত একমাত্র ধর্ম ইসলাম। পথ
দেখায়েছেন তাঁরা লাখো কোটি
পথভোলা মানুষকে। বিশেষ করে পাক
ভারত উপমহাদেশে হেদায়েতের ধারা
অব্যাহত রাখার জন্য আল্লাহ রাব্বুল
আলামিন খোরাসানের অন্তর্গত সঞ্জর
নামক গ্রামে আতায়ে রাসুল
ﷺ , হিন্দল অলী হযরত খাজা
গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর
আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। এই দুনিয়ায়
কদমের ধূলো দিয়ে বরকতময় ধন্য করেছেন
যুগ যুগান্তর ধরে বহু আউলিয়ায়ে কেরাম।
কিন্তু পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রান্ত
পর্যন্ত প্রিয় নবীর ﷺ-এর
ইসলামের বাগানে খাজা গরীবে
নেওয়াজ এর মত ফুল অত্যান্ত বিরল। আর এ
ফুলের খুশবতে কত হৃদয় যে আল্লাহ ও তার
প্রিয়তম রাসুলে পাক ﷺ এর
এশকে মহব্বএত দিওয়ানা হয়ে খাঁটি রাসুল
প্রেমিক হয়ে গেছেন এবং আজও হচ্ছেন
তাও কোন হিসাব শেষ করা যাবেনা।
মায়ের বুকের ধুধ পান করে শিশু সন্তান
যেমন পূর্ণ হয়ে উঠে ঠিক তেমনি খাজা
গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ রে কলব
মোবারকের ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ নিয়ে
তরিকতের পথিকেরা আল্লাহ পাকের বন্ধু
হিসেবে পরিণত হয়ে হৃদয় উজ্জ্বল ও
চিরজীবন্ত করে নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন।
একথা আজ সর্বজন স্বীকৃত যে , ত্বরীকত
ব্যতিত শরীয়ত স্থায়ী হয়না। আর তাই
হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ইসলামের পতাকা বুলন্দ রাখার জন্য এবং
আল্লাহপাক ও রাসুল ﷺ এর
নৈকট্য ও মারেফাত তথা ইসলামের মূল
লক্ষ্যবস্তু লাভের উদ্দেশ্যে মুসলমানদের
জন্য চিশতিয়া ত্বরীকা প্রবর্তন করেন।
খাজা মঈদ্দীন হাসান সঞ্জরী চিশ্তী
ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ৫৩৭ হিজরী সনের রজব
মাসের ১৪ তারিখ সোমবার পত্যুষে এই
পৃথিবীতে শুভাগমনকরেন। তাঁর পিতারর
নাম সৈয়্যদেনা হযরত গিয়াস উদ্দিন
হাসান ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এবং মাতার নাম
সৈয়্যদেনা হযরত বিবি মাহনূর উম্মল
ওয়ারা ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ।
খাজা গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ হুজুর
পাক ﷺ এর দোয়া এবং
নির্দেশ লাভ করে পবিত্র আজমীরে
আগমন করেছিলেন। কালের পবির্তনের
সাথে সাথে আজমীরের ঐতিহাসিক
গুরুত্বে পরিবর্তন ঘটতে থাকে কিন্তু
খাজা বাবার তথায় আগমন এবং
অবস্থানের ফলে আজমীরে যেভাবে
কলেবর বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাচ্ছে ও
গৌরবের অধিকারিনী হয়েছে তা
অবর্ণনীয়। খাজা বাবা ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ স্বীয়
মাতৃভূমি হতে রাসুলে পাক ﷺ
এ নির্দেশে হিজরত করে হিন্দুস্থানের
মাটিতে ইসলাম ধর্মপ্রচারের জন্য
জীবনের অর্ধেকেরও অধিক সময় ব্যয়
করেছেন। তাঁর দৃঢ়তায় উপমহাদেশে
ইসলামের পতাকা বুলন্দ ও সুদৃঢ় হয়। অসংখ্য
লোক ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
খাজা বাবা ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ছিলেন হুজুরে
করিম ﷺ এর মূর্ত প্রতীক। তাঁর
অমায়িক আচরণ, বদান্যতা, পরোপকার
এবং কেরামতের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে অধিক
লোক ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নেন।
প্রকাশ আছে যেকোন বিধর্মী লোক তাঁর
দরবারে একবার আসলেই ইসলামের প্রতি
আকৃষ্ট হয়ে যেতেন এবং পরবর্তীতে
ইসলাম গ্রহণ করতেন। খাজা গরীবে
নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ শৈশবকাল থেকে
পরহিতার্থী ছিলেন। শিশুকালে আপন নতুন
জামা-কাপড় অপর শিশুকে দান করে
দিতেন। অভাব গ্রস্তদের অভাব দূরী করণে
তিনি ছিলেন মুক্তহস্ত। তাঁর দরবারে আসা
কোন মেহমান আহার না করে বিদায়
নিতে পারতেন না। তিনি তাঁর
অনুসারীদের প্রতি সবসময় গরীব , মিছকিন
ও এতিমদের মহব্বত করার জন্য উপদেশ
দিতেন। জীবদ্দশায় তিনি একটি
লঙ্গরখানা প্রতিষ্ঠা করে যান। অদ্যাবধি
উক্ত লঙ্গর খানায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে খাদ্যগ্রহণ
করে থাকে। ধন সম্পদের প্রতি খাজা
বাবার ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ আসক্তি ছিলোনা
মোটেই। জীবদ্দশায় অনেক ধনী ব্যক্তি,
আমির , রাজা, বাদশা তাঁর ভক্ত ছিলেন।
কস্মিনকালেও স্বীয় লোভ লালসায়
বশীভূত হয়ে কারো দ্বারস্থ হয়েছেন
এইরকম প্রমাণ নেই। কখনও নজরানা স্বরূপ
কিছু প্রেরিত হলে তিনি তা তাবলীগেরর
স্বার্থে, অভাব-দুঃখীদের মাঝে অথবা
লঙ্গরখানার ব্যয় নির্বাহে বিলিয়ে
দিতেন। খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ এর শিরা -উপশিরায় সঞ্চারিত
পিতৃকুল ও মাতৃকুল পুরুষানুক্রমে
মহাসাধকের শিক্ষা ও রক্তধারা তাঁকে
উন্নতির সর্বোচ্চ আসনে আসীন হওয়ার
জন্য যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তিনি এতে
ক্ষান্ত হননি। বরং সাধনার মাধ্যমে মহান
আল্লাহপাক ও রাসুল ﷺ এর
সন্তুষ্টি লাভ করাই ছিল তাঁর একমাত্র
কামনা। অতএব খাজা গরীবে নেওয়াজ
ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ইবাদত -বন্দেগীর মাধ্যমে
আল্লাহ ও রাসুল ﷺ এর
সান্নিধ্য লাভের জন্য পার্থীব সুখময়
জীবন বিসর্জন ও লোভ লালসা ত্যাগ করে
বরণ করে নিলেন কন্টকাকীর্ণ এক দুর্গম
পথ। অতঃপর ঘাত-প্রতিঘাতের মাধ্যমে
আল্লাহ ও রাসুলের ﷺ উপর
একমাত্র ভরসা করে সামনের দিকে
এগিয়ে যান।
পুরস্কার স্বরূপ তিনি সাধককুলের স¤্ রাট,
সুফীবৃন্দের গৌরব , তাপস ও অলীকুলের
শিরোমনির আসনে অধিষ্ঠিত হন। খাজা
বাবার ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ বয়সযখন মাত্র ১৫ তখন
তাঁর পিতা খাজা গিয়াস উদ্দিন ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ ইন্তেকাল করেন। পিতার বিদায়ে
খাজা মঈনুদ্দীন চিশতি ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলেন।
তাঁর কোমল হৃদয় পিতৃশোকে হাহাকার
করে উঠল। তাঁর পরম ¯ে œহময়ী মাতা
তাঁকে সান্তনা দিয়ে বলেন - “বাবা! তুমি
বিচরিত হইওনা , দুঃখ করোনা মহান
আল্লাহপাক তোমাকে সুপথ দেখাবেন।’
কিন্তু তাঁর সহজ সরল মাতা তখন ভাবতেই
পারেননি যে , খাজা ম্ঈনুদ্দিন চিশ্তী
ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ কে সুপথে চলার জন্য কত
বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। কত বাধা কত
আঘাত অতিক্রম করতে হবে। তাঁর পিতার
ইন্তেকালের কিছুদিন যেতে না যেতেই
তাঁর মাতা বিবি মাইনূর উম্মুল ( রঃ ) ও
চিরদিনের জন্য দুনিয়া ছেড়ে চলে যান।
প্রসঙ্গত , খাজা গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ পিতৃকূল ও মাতৃকূল উভয় দিক থেকে
ছিলেন সাইয়েদ বংশীয়। তাঁর পিতা
একজন অজস্র ধন -সম্পদের মালিক থাকা
সত্বেও শুধুমাত্র ধন-সম্পদই তাঁর কাম্য
ছিলনা। তিনি ছিলেন একজন মহাজ্ঞানী
ও মহাসাধক। দিনের বেলায় তিনি ব্যবসা -
বাণিজ্য করতেন এবং রাতের বেলা
আল্লাহর ইবাদতের মশগুল থাকতেন।
অপরদিকে খাজা বাবার ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
মাতা ও ছিলেন খোদা ভক্ত , রাসুল
ﷺ প্রেমিক ও সতী -সাধ্বী
রমনী। সংসার কার্য পরিচালনা
পাশাপাশি তিনি আল্লাহ ’ র ্্ ইবাদত
ব্যতীত অন্য কোন কাজ ছিলনা। এদিকে
খাজা গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ যাঁর
মুরীদ ছিলেন তিনি হলেন , প্রখ্যাত
অলীয়ে কামেল হযরত খাজা ওসমান
হারুনী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ । খাজা হারুনী ﺭﺣﻤﺔ
ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ খোরাসান ও ইরাকের
মধ্যবর্তীস্থানে নিশাপুরের অন্তর্গত হারুন
নামক একটি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি
ছিলেন সাইয়েদ বংশীয়। শেরে খোদা
হযরত আলী ﷺ বংশের একাদশ
অধঃস্ত নীয় পুরুষ খাজা হারুনী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ হচ্ছেন আউলিয়াগণের মাথার মুকুট।
খাজা মঈনুদ্দঈন চিশ্তী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ যে
ত্বরীকায় দীক্ষা গ্রহণ করেন তার নাম
‘ চিশতীয়া ত্বরীকা। ’ তাঁর সপ্তম উর্ধ্বতন
পীর খাজা চিশ্তীর নাম অনুসারে এই
ত্বীকার নামকরণ করা হয়েছে চিশ্তীয়া।
খাজা বাবা ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ তাঁর পীরের
আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন ,
এতে খুশী হযে খাজা মঈনুদ্দীন ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ
ﻋﻠﻴﻪ এর মাথায় তাঁর পীর ওসমান হারুনী
ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ যে চর্তুকোণ বিশিষ্ট টুপিটি
প্রদান করেছিলেন এরর মধ্যে চারটি অর্থ
বিদ্যমান ছিল। তাঁর দাদাপীর হাজী
শরীফ জিন্দানী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ও কামেল
অলী -আল্লাহ ছিলেন। খাজা হারুনীকে
খেলাফত প্রদানের সময় এই চারকোণা
টুপিটি তাঁর মাথায় পরিয়ে দিয়ে বলেন ,
“বাবা ওসমান এই টুপিটি আমি তোমাকে
দান করলাম। এটি চারিকোণা বিশিষ্ট
হওয়ার ৪টি অর্থ আছে। ( ১) তোমাকে
পার্থিব জগতের সকল প্রকার লোভ-
লালসা ত্যাগ করতে হবে। কোন
অবস্থাত্ইে এসব নিজের মধ্যে স্থান
দেয়া চলবে না। এটি একটি মারাত্মক
রোগ , যা অন্তর হতে আল্লাহ ও রাসুলকে
ﷺ দূরে রাখে। ( ২ ) খাহ্শোতে
নফ্ছ বা প্রবৃত্তির তাড়নাকে একবারে দূর
করতে হবে। মন যা চায় তা যদি কর তবে
মারেফাতের পথে অগ্রসর হওয়া দুৎসাধ্য
হবে। পাপের পথে পরিচালনাকারী জৈব
শক্তিএক সর্বদা দমন করতে হবে। ( ৩ )
স্বল্পাহার ও কম নিদ্রায় অভ্যাস করতে
হবে।্ অতিরিক্ত আহার ও ঘুম আল্লাহর
ইবাদতে বাধ সৃষ্টি করে। এতে অন্তর
আল্লাহ ও রাসুল ﷺ বিমূখ হয়।
( ৪ ) পারলৌকিক সুখ -শান্তির আশা মন হতে
দূর করতে হবে। জান্নাতের আশায় কিংবা
জাহান্নামের ভয়ে যারা ইবাদত করে
তারা ইশকে ইলাহীর সভাদ কখনো পায়
না। এটি মা ’ রেফাতের অতি নি ¤œস্তর।
সুতরাং এই স্তর অতিক্রম করে খোদা ও
রাসুল ﷺ এর প্রেমের স্বাদ
পেতে চেষ্টা করবে। তিনি আরও নসিহত
করেলেন যে , তোমার পর তোমার
মুরীদানের মধ্যে যাঁর মধ্যে এই ৪টি গুণ
দেখবে সেই এই টুপির উপযুক্ত। অনুপযুক্ত
লোকের অধিকার এ্ই পবিত্র টুপির উপর
নেই। সিন্ধু বিজয়ের সময় মুহাম্মদ বিন
কাসিমের সাথে যে সকলধর্ম প্রচারক
হিন্দুস্থানে এসেছেন তাঁর সকল্ই সিন্ধু ,
পাঞ্জাব , কাশ্মীর ও ভারতের বিভিন্ন
অংশে ভ্রমণ করে ইসলাম ধর্মপ্রচার
করেছিলেন। তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টায়
অনেক কামেল অলীও রাসুল
ﷺ প্রেমিক এসব এলাকায়
সৃষ্টি হয়েছেন। তবে দুঃখের বিষয়
ঐতিহাসিকগণ তাঁদের কারও নাম
উল্লেখকরতে পারেননি।
এছাড়া তাঁদের প্রচাকার্য শুধুমাত্র সিন্ধু
ও নির্দিষ্ট কিছু এলাকার মধ্য্ইে
সীমাবদ্ধ ছিল। মূলতঃ খাজা মঈনুদ্দীন
চিশ্তীই ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ একমাত্র ব্যক্তি
যিনি হিন্দুস্থানে ইসলাম ধর্ম
প্রচারকার্য চালিয়ে সফল হন। খাজা
গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর
বিশেষত্ব ছিল তাঁর সাধনায়। শৈশবকালে
হযরত ইব্রাহীম কানদুয়ী ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
প্রদত্ত রুটির টুকরোটি ভক্ষণ করার পর
সাধনা জগতে বিচরণের যে উম্মত্ত
আকাংখা তাঁকে পেয়ে বসেছিল
দুনিয়াবী জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তা
কখনও নিবৃত্ত হয়নি। জানা যায় , খাজা
বাবা ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ আশ্চর্যজনক রিয়াজত
সাধনা করতেন। বৎসরের অধিকাংশ সময়
তিনি রোজা রাখতেন। কখনও কখনও তিনি
সপ্তাহ ধরে পানাহার করতেন না। তিনি
সবসময় ওজু অবস্থায় থাকতেন। বর্ণিত
আছে, খাজা বাবা ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
একাধারে ৭০ বছর পর্যন্ত এশার নামাজের
ওজু দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেন।
দিনের বেলায় প্রায়ই তিনি রোজা
রাখতেন। রাতের বেলা সারারাত জেগে
এবাদত করতেন এবং পবিত্র কোরআন ও
ওজীফা তেলোয়াত করতেন। তিনি যখন
আল্লাহ -রাসুলকে ﷺ পাওয়ার
জন্য কল্পনার জগতে ডুবে থাকতেন তখন
বাস্তব জগতের কোন খেয়ালই তাঁর থাকত
না। আল্লাহর ওলীগণ সাধারণ লোকের
জন্য এক বিশেষ রতœ। আর এই রতœ যারা
সযতেœ রাখেন তাদের মতো বড় ধনী আর
নেই্ খাজা গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
বলেছেন , “যে ব্যক্তি অন্তরের সাথে
কোন বুযুর্গ আলেমকে ভালবাসেন তাঁর
আমল নামায় একহাজার বৎসরের এবাদত
লিখা হয়। এই অবস্থায় মারা গেলে সেই
ব্যক্তিকেও আলেমদের মর্যাদা দেওয়া
হবে।’ হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ
ﷺ পরিপূর্ণ ভাবে সত্যের
আলো প্রজ্জ্বলিত করে দিয়ে তিনি ৯৭
বছর বয়সে হিজরীর ৬ রজব তারিখে মানব
সমাজের চোখের অন্তরাল হন, ওফাতের
সাথে সাথে তাঁর পবিত্র কপাল শরীফে
স্পষ্টভাবে আরবীতে স্বর্ণোজ্জ্বল
নুরানী অক্ষরে লিখা হয়ে যায় ,
হাবীবুল্লাহে মা ’ তা ফিহুববিল্লাহ ’
অর্থাৎ আল্লাহর বন্ধু আল্লাহর সাথে
পূর্ণভাবে মিলিত হয়ে গেছেন।
ছোবাহানাল্লাহ। আজ পর্যন্ত এমন একজন
অলিকেও দেখা যায়নি ‘‘ হাবিবুল্লাহ ”
উপাধিতে এমনভাবে গৌরবান্বিত
হয়েছেন এবং ওফাতের পর কপাল শরীফে
আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এভাবে
লেখা হয়ে যায়। হে আল্লাহ্ আমাদেরকে
ঈমান রক্ষার দুর্যোগপূর্ণ সময়ে খাজা
গরীবে নেওয়াজ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ এর আদর্শ ও
নীতি অনুসরণ করে বাস্তব জীবনে অনুসরণ
করার তৌফিক দান করুন। আমিন , ছুম্মা

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন